কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ লক্ষ টাকার দূর্নীতির অভিযোগ

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েদুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দূর্নীতি’র মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ, ডাক্তার-নার্সদের সাথে দূর্ব্যবহার ও সাধারণ রোগী ভর্তি না করার অভিযোগ উঠেছে। এ যেন নিয়মিত দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে।

এ অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে দূর্নীতি দমন কমিশন সমন্বিত কার্যালয় টাঙ্গাইল বরাবর একটি লিখিত আবেদন করেছেন স্থানীয় আবু মুহাম্মদ জিন্নাহ নামে এক ব্যক্তি।

লিখিত অভিযোগে জানা যায়, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর কালিহাতী উপজেলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। তার যোগদানের পর থেকেই শুরু হয় অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। সরকারি এম্বুলেন্স তিনি ব্যক্তিগত গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করায় রেফার্ড করা সাধারণ রোগীদের প্রাইভেট এম্বুলেন্সে যাতায়াত করতে হয়। এমতাবস্থায় কালিহাতী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী খালুয়া বাড়ী গ্রামের খলিলুর রহমান (৮৫) চলতি বছরের ২ এপ্রিল হাসপাতালের এম্বুলেন্স না পেয়ে প্রাইভেট এম্বুলেন্সে (নং ঢাকা মেট্টো-ছ-৭১১৮৯৬) টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার সময় বাংড়া ব্রিজে এসে এম্বুলেন্সে রক্ষিত অক্সিজেন সিলিন্ডারের অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই ওই রোগী মারা যায়। তার অব্যবস্থাপনার কারণে ওই হাসপাতালের ল্যাবরেটরিতে সিরাম কিটেনিন, আলট্টা করানো হয় না। অথচ এই দুই পরীক্ষা বাবদ প্রতিমাসে কালিহাতী ক্লিনিক প্রাইভেট লি. কে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি (এসএসকে) ফান্ড থেকে পরিশোধ করতে হয়।

এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন খাত ও কোডে পিপিআর-৬ ও পিপিআর-৮ অনুসরণ না করে ঠিকাদারদের ফাঁকি দিয়ে মনগড়া নিজের ইচ্ছামত ক্রয় কমিটি করে সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে উৎকোচের বিনিময়ে বিল উত্তোলণ করেছেন ডা. মো. সায়েদুর রহমান।

এছাড়াও পুরাতন এম্বুলেন্সের ছিট মেরামত করে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অনিয়মের খাতগুলো হল- কোড ও খাত- ৩২১১১০২ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা- স্বাঃঅধিঃ/বাজেট-২০/৪২৩১, তারিখ-২১/৪/২০২০ মূলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কোড ও খাত- ৩২১১১০২ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা- স্বাঃঅধিঃ/বাজেট-২০/৩২৭৫, তারিখ-১৫/১/২০২০ মূলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, কোড ও খাত- জনস্বাস্থ্য পুষ্টি বিষয়ক বাবদ ৩ লাখ টাকা, কোড ও খাত- করোনা উপলক্ষ্যে ৩ লাখ টাকা, কোড ও খাত- ডেঙ্গুর কিট বাবদ ২ লাখ টাকা, কোড ও খাত- ৩২৪৩১০১ সিবিএইসি, ১২৬০, তারিখ- ২/৬/২০২০ মূলে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা (জেনারেটর খরচ বাবদ), কোড ও খাত- ৩২১১১০২ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা (সিবিএইচসি) বাবদ ৩ লাখ ৬২ হাজার টাকা (আইবাস অনুযায়ী), কোড ও খাত- ৩২২১১০৬ পরিবহন ব্যয় বাবদ ৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা (আইবাস অনুযায়ী), কোড ও খাত- ৩২৫৫১০৪ স্ট্যাম্প ও সীল (মনোহারী) বাবদ ৫ লাখ ৪০ হাজার টাকা সহ মোট ২৮ লাখ টাকা অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে অফিস সহকারী মনছুর আলী’র সহায়তায় রাত ১০টা পর্যন্ত গোপনে কাজ করে ওই সব টাকা উত্তোলন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়াও ২০১৯-২০ অর্থবছরে মেডিকেল এন্ড সার্জিক্যাল রিকুইজিট (এমএসআর) ক্রয়ের জন্য ঢাকার একটি পত্রিকায় ১০০ ইঞ্চি একটি টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেয়। ওই বিজ্ঞাপনটি পত্রিকায় নিউজ ফন্টের চেয়ে কয়েক গুণ বড় ফন্টে প্রকাশিত হয়। যার ফলে সরকারের ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। মনোহারি ঠিকাদারের তালিকায় বিøচিং পাউডার থাকা স্বত্বেও এমএসআর তালিকায় বিøচিং পাউডার সিডিউলে উল্লেখ করা হয়েছে। এমএসআর ঠিকাদার নির্বাচনে সর্বনি¤œ দরপত্র দাতা নির্বাচন না করে সিডিউল পরিবর্তন করে উচ্চ করদাতাকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সর্বনি¤œ দেখিয়ে কার্যাদেশ প্রদান করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. সায়েদুর রহমান হাসপাতালের স্টাফদের মূল্যায়ন না করে নিজের ইচ্ছামত বাহিরের দুই জন লোক তার কক্ষে বসিয়ে কম্পিউটারে সরকারের কাজকর্ম করিয়ে থাকে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবমূর্তি ক্ষন্ন করা হয়েছে। হাসপাতালে কর্মরত ১০ জন ডাক্তারের মধ্যে ৩ জন দ্বারা ডিউটি করানো হয় বাকিরা বাইরে থাকে।

কুকমশাল (বাবুর্চি) থেকে অফিস সহকারী মনছুর আলী একাই ক্যাশিয়ার, প্রধান সহকারী, হিসাবরক্ষক ও এসএসকে’র দায়িত্ব পালন করে আসছেন। যার ফলে স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েদুর রহমান ও অফিস সহকারী মনছুর আলী’র সমন্বয়ে এসব দূর্নীতি করে আসছে।

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডা. মো. সায়েদুর রহমান’র কাছে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার অফিস আমি কিভাবে চালাব সেটা আমার বিষয়। প্রয়োজনে মালি, মুচি, সুইপার দিয়ে অফিস চালাবো তাতে আপনাদের কি?

এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান জানান, দুদকের অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমার দপ্তরে যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই সেক্ষেত্রে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।