বেয়াইকে ভবিষ্যতে উপদেষ্টা বানিয়ে মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ

টাঙ্গাইল জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে সমালোচনার ঝড়

সখীপুর

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের সখীপুরে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে নিজের বেয়াইকে ‘ভবিষ্যৎ’ উপদেষ্টা বানিয়ে আ.লীগের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গতকাল শুক্রবার রাতে এ অভিযোগ করেন।

তাঁদের অভিযোগ, জীবনে কখনো আওয়ামী লীগ না করলেও তাঁর বেয়াইকে (সংসদ সদস্যের ভাতিজির শ্বশুর) উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর ‘গায়েবি’ সদস্য বানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে সুপারিশ করে।

এর ফলে গতকাল রাত ১১টার সময় গণভবনে বসা মনোনয়ন বোর্ড উপজেলার নবগঠিত বড়চওনা ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে সংসদ সদস্যের বেয়াই ইউসুফ আলী ভূঁইয়াকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেন।

এদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নিজের বেয়াইকে গায়েবি উপদেষ্টা বানানোর এ ডিও লেটারটি (আধা সরকারিপত্র) গতকাল শুক্রবার বিকেলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হলে উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের নেতারা সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তাদের কেউ কেউ এ ডিও লেটারকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতারণা বলে মন্তব্য করেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, সদ্য ঘোষিত তফসিল মোতাবেক টাঙ্গাইলের সখীপুরের চারটি ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১৭ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এ লক্ষ্যে চারটি ইউনিয়নে ২৬ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন।

গত ৯ জুন (শুক্রবার) রাতে গণভবনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়ন বোর্ডের সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ও ইউনিয়ন পরিষদ মনোনয়ন বোর্ডের সভাপতি শেখ হাসিনা।

সভা শেষে রাত ১১টার দিকে উপজেলার চারটি ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়।

ওই ঘোষণায় বড়চওনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বেয়াই ইউসুফ আলী ভূঁইয়ার নাম আসে।

প্রতিক্রিয়া –

পরদিন শনিবার (১০ জুন) বেলা ১১টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অনুপম শাজাহান জয় বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সহসভাপতি আজহারুল ইসলাম ৪২ বছর ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে তাঁর নাম জেলায় পাঠিয়েছিলাম।

স্থানীয় সংসদ সদস্য গোপনে আজহারুল ইসলামের নাম কেটে তাঁর বেয়াই ইউসুফ আলীর নাম দেন।

শুধু তাই নয়, তার বেয়াই আওয়ামী লীগ না করলেও তাকে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের গায়েবি উপদেষ্টা বানিয়ে মনোনয়ন বোর্ডের কাছে ডিও লেটার দিয়ে সুপারিশ করেন।

সংসদ সদস্য এই কাজটি সঠিক করেননি। এটা উপজেলা আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতারণা।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বড়চওনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত আজহারুল ইসলাম ওইদিন বেলা ১২টায় বলেন, সংসদ সদস্য তাঁর বেয়াইকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে মিথ্যা ডিও লেটার দিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

তাই তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে বহিষ্কার করার সুপারিশ করছি।

বেয়াই প্রার্থীর বক্তব্য –

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বেয়াই ইউসুফ আলী ভূইয়া বলেন, ‘শেখ হাসিনা আমাকে অনেক যাচাই-বাছাই করে মনোনয়ন দিয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে আমিও আওয়ামী লীগ করি, তবে কোথাও আমার নাম বা পদ ছিল না।

সংসদ সদস্য আমাকে বলেছেন তিনি আমাকে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বানিয়েছেন। এখানে আমার তো কোন দোষ নেই।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের বক্তব্য –

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদার বলেন, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ইউসুফ আলী ভূঁইয়া তিনি কখনোই কোন কালেও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন না।

তিনি তো কখনো আওয়ামী লীগই করেননি, উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হবেন কীভাবে। সংসদ সদস্য এক্ষেত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

টাঙ্গাইল-৮ (সখীপুর-বাসাইল) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম মুঠোফোনে গতকাল বিকেলে বলেন, ইউসুফ আলী ভূইয়াকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সম্পাদক উপদেষ্টা হিসেবে অস্বীকার করলে আমি তাঁকে জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা বানাবো।

ডিও লেটারে উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা হিসেবে সুপারিশ করা এটা ‘মিসটেক’ হয়েছে।

জেলার নেতৃবৃন্দের কথা –

এদিকে এই ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের মধ্যও চলছে নানান গুঞ্জন। কথা হয় বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতার সাথে।

তবে তারা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হন নি।

তারা জানান, এটা নিয়ে আমরা নেতাকর্মীরা বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছি।

তারা আরো জানান, এখনো জেলা কমিটি অনুমোদন হয় নি। এই পরিস্থিতিতে তারা কোন কথা বলতে রাজি না।

তবে তারা জানান, যেহেতু জেলা কমিটি অনুমোদন হয় নি; কোন নেতাকর্মী বিষয়টি নিয়ে বিরোধীতা করবে না ভেবেই হয়তো এই সুযোগটা নিয়েছেন তিনি।  সম্পাদনা – অলক কুমার