কোন যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় বঙ্গবন্ধুকে অবমাননাকারী দুলাল চকদার নৌকার কান্ডারি?

বিশেষ প্রতিবেদক : শুধু গোবিন্দাসী নয়, ভূঞাপুরেও সর্বোচ্চ আলোচিত বিষয়; কোন সে যাদুর কাঠির ছোঁয়ায় গোবিন্দাসীতে দুলাল চকদার হয় নৌকার কান্ডারি?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননাকারী দুলাল চকদার কিভাবে নৌকা প্রতীক পায়?

তাদের আরো প্রশ্ন, মাত্র সাত মাস আগে দল থেকে বহিস্কৃত দুলাল চকদার সাত মাস পরেই দলীয় প্রতীক পায় কিভাবে?

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামী আব্দুস সালাম পিন্টুর ঘনিষ্ট সহচর কিভাবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পায়?

এই সব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে পারছে না ইউনিয়নবাসী।

তবে উত্তর মেলাতে গোবিন্দাসী ইউনিয়নবাসীসহ ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মীই বলছেন অনেক কথা।

সরাসরি নাম না বললেও তাদের আঙ্গুল ভূঞাপুরের শীর্ষস্থানীয় দুই নেতার দিকে।

গোবিন্দাসী ইউনিয়নবাসী যা বলেন :

তাদের অভিযোগ, কোটি টাকার বিনিময়ে মাত্র সাত মাস আগে দল থেকে বহিস্কৃত দুলাল চকদার নৌকার মাঝি হতে পেরেছেন।

ইউনিয়নবাসী জানান, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামী আব্দুস সালাম পিন্টুর হাত ধরে বিএনপিতে প্রবেশ করেই ঘনিষ্ট সহচর হয়ে যায় দুলাল চকদার।

তার বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙ্গাসহ হত্যা, ধর্ষণ, মাদক, গুলি বর্ষণ, চাঁদাবাজির একাধিক মামলা রয়েছে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মদদদাতা ও আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দার হিসেবেও রয়েছে তার বিশেষ পরিচিতি।

এত কিছু থাকলেও ২০১৭ সালে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে অর্থের বিনিময়ে পেয়ে গেছে আওয়ামী লীগের পদপদবী।

ইউনিয়নবাসী আরো জানান, ১৯৯১ সালে সালাম পিন্টুর হাত ধরে বিএনপিতে যোগদান করেন দুলাল চকদার।

সেসময় গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, বঙ্গবন্ধুর ছবি পায়ে মারিয়ে অবমাননা করেন এই দুলাল চকদার।

সেই সময় বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় কেউ মামলা করতে সাহস পায়নি; পরবর্তীতে ভূঞাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মালেক তালুকদার বাদী হয়ে ভূঞাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলা নং – ০৩, তারিখ – ০৯-০৭-২০১৭। দুলাল চকদারকে প্রধান আসামী করে ওই মামলা দায়েক করা হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশেষ যাদুর কাঠির ছোঁঁয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রাপ্ত দুলাল চকদার হত্যা, মাদক, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, চুরি ও হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট সহ মোট ৫টি মামলার এজাহার ভূক্ত আসামী।

দুলাল চকদারের মামলার বিবরণ :

১। টাঙ্গাইল এর ভূঞাপুর থানার এফআইআর নং-১১, তারিখ- ১৮ ডিসেম্বর, ২০১৪; ধারা- ২২ (গ) ১৯৯০ সালের মাদক দ্রব্য নিন্ত্রয়ণ আইন।

২। টাঙ্গাইল এর ভূঞাপুর থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ- ০৭ জানুয়ারি, ২০১৩; ধারা- ১৪৩/ ৩২৩/ ৫০৬/ ৩৮৫/ ৪৩৬/ ৪২৭/ ১০৯ পেনাল কোড-১৮৬০।

৩। টাঙ্গাইল এর ভূঞাপুর থানার এফআইআর নং-৫, তারিখ- ১১ ডিসেম্বর, ২০১২; ধারা- ১৪৩/ ৩২৩/ ৩২৫/ ৩০৭/ ৩৭৯ পেনাল কোড-১৮৬০।

৪। সিরাজগঞ্জ এর সিরাজগঞ্জ সদর থানার এফআইআর নং-৪, তারিখ- ০৩ এপ্রিল, ২০১২; ধারা- ৩৪২/ ৫০৬/ ৩৭৯/ ৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।

৫। টাঙ্গাইল এর ভূঞাপুর থানার এফআইআর নং-৭, তারিখ- ১৮ ডিসেম্বর, ২০১১; ধারা- ৪৪৭/ ৪৪৮/ ৩৮৫/ ৫০৬/ ৩২৩/ ৩৪ পেনাল কোড-১৮৬০।

৫টি মামলার এজাহারেই তিনি অভিযুক্ত হয়েছেন।

মনোনয়ন প্রাপ্তির পর প্রতিক্রিয়া –

গত ২২ ডিসেম্বর গোবিন্দাসী ইউনিয়ন ঘুরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ইউনিয়নবাসীর মধ্যে।

এর আগে ২৬ নভেম্বর (শনিবার) সকালে উপজেলার গোবিন্দাসী টি-রোডে এ মানববন্ধন করে এলাকাবাসী।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের প্রধান আসামী মো. দুলাল হোসেন চকদারকে টাকার বিনিময়ে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদকারী, গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধা ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা; উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, ইব্রাহীম খাঁ সরকারি কলেজের সাবেক জি.এস, গোবিন্দাসী ইউনিয়ের সাবেক চেয়ারম্যান এবং গোবিন্দাসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মো. আমিনুল ইসলাম আমিন; ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহুরুল ইসলাম।

মানববন্ধনে অংশ নেয়, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিক, নাজমুল হোসেন তারা; জয়নাল আবেদীন; মো. আমিন মন্ডল; বেলায়েত হোসেনসহ ইউনিয়নের বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা মানববন্ধনে অংশ নেন।

মানববন্ধনে বক্তারা যা বলেন :

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, ইকরাম উদ্দিন তারা মৃধা ও আমিনুল ইসলাম আমিন জন্মলগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাজ করে আসছে এবং আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।

তাদের বাদ দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ভাঙচুরের প্রধান আসামি দুলাল হোসেন চকদারকে টাকার বিনিময়ে ও অনৈতিক প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

বক্তারা আরো বলেন, তিনি (দুলাল হোসেন চকদার) দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় ইউনিয়নবাসী চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে।

এ কারণে দুলাল হোসেন চকদারের পরিবর্তে যোগ্য কোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পুনর্বিবেচনার দাবি জানান।

বক্তারা এ মনোনয়নকে প্রত্যাখান ও প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।

তবে এসব বিষয়ে জানতে গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দুলাল চকদারের সাথে মুঠোফোনে এবং স্বশরীরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এখন ব্যস্ত আছি, পরে কথা বলবো। সম্পাদনা – অলক কুমার