টাঙ্গাইলে প্রায় ৫০ বছর পর এক মঞ্চে দুই আওয়ামী পরিবার

খান ও সিদ্দিকী পরিবারের ‘বন্ধন’, ত্যাগীদের প্রত্যাশা হইব্রিডের পতন

আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও আমানুর রহমান খান রানা

অলক কুমার : দীর্ঘ প্রায় পাঁচ দশকের বিভেদ ভুলে ‘এক’ মঞ্চে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আলোচিত সিদ্দিকী পরিবার ও খান পরিবার।

এই দুই পরিবারের দুইজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য এক মঞ্চে দাঁড়িয়ে টাঙ্গাইলের রাজনীতির ‘ধূম্রজাল ধ্বংস’ করতে নতুন ‘বন্ধনে আবদ্ধ’ হওয়ার ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন।

এতে করে কি টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগে স্থান করে নেয়া হাইব্রিডদের উচ্ছেদের মধ্য দিয়ে ত্যাগী নেতাদের মূল্যায়ন হবে?

আরো পড়ুন – মুনাফার অংশ যায় পোস্টমাস্টারের পেটে, অভিযোগ গ্রাহকের

এরকম প্রশ্ন অনেক নেতাকর্মী। অপরদিকে অনেকেরই কথা খান ও সিদ্দিকী পরিবার আওয়ামী লীগের কেউ না।

আলোচিত দুই পরিবারের এমন অবস্থান নিয়ে টাঙ্গাইলের রাজনীতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।

অনেকেই এটিকে আওয়ামী রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ হিসেবে দেখছেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, এই দুই পরিবারের বিরোধ প্রায় পাঁচ দশক ধরে।

দুই পরিবারই এখন দলীয় রাজনীতিতে বেকায়দায়।

লতিফ সিদ্দিকীর মাথার ওপর রয়েছে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারাদেশ আর খান পরিবারের সন্তানেরা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা ফারুক হত্যা মামলায় অভিযুক্ত।

তাঁরা হারিয়েছেন দলীয় পদ-পদবি। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লতিফ সিদ্দিকী ও খান পরিবারের আমানুর রহমান খান ওরফে রানা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

যেখানে মিলন তাদের –

শনিবার (২ ফেব্রুয়ারি) টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ‘শামসুর রহমান খান শাহজাহান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের’ শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান ও টাঙ্গাইল-৪ (কালিহাতী) আসনের সংসদ সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। শামসুর রহমান সংসদ সদস্য আমানুরের চাচা।

দুই পরিবারে দুই কর্ণধার যা বলেন –

শনিবারের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমার সাথে কারও সম্প্রীতি নাই, সখ্য নাই।

শাহজাহান ভাইয়ের (শামসুর রহমান শাহজাহান খানের ডাক নাম) সাথেও আমার দ্বন্দ্ব ছিল, কিন্তু সংঘাত বা সংঘর্ষ হয়নি।

দ্বন্দ্বটা প্রকাশ হয়েছে যুক্তিতে, চিন্তাভাবনার বিনিময়ে।’

তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল কী হয়েছে, সেটা বেদনাদায়ক, আনন্দদায়ক, দুঃখজনক না আশাপ্রদ- এ নিয়ে আমার ভাবনা নাই। আজকে কী হবে, সেটাই আমার ভাবনা।’

লতিফ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘সত্যিই যদি আতোয়ার ভাইয়ের ছেলেদের, শাহজাহান ভাইয়ের ভাতিজাদের (সংসদ সদস্য আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা) মন আলোকিত হয়ে থাকে, আলহামদুলিল্লাহ; আমি বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি আছি।’

এর আগে বক্তৃতাকালে সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান লতিফ সিদ্দিকীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনি আমাদের অভিভাবক।

আজকে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে, সেটা আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে কাজ করতে হবে।

আমি এবং আমার পরিবার আপনার সঙ্গে থেকে সেই ধূম্রজাল ধ্বংস করব।

এদেশ স্বাধীন করার জন্য আপনি যে ত্যাগ করেছেন, আমার চাচা শামসুর রহমান খানও ত্যাগ করেছেন, অনেক কষ্ট করেছেন।

যারা কোনো কষ্ট করেনি, তারা রাজনীতি ও আওয়ামী লীগকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।

আপনি অভিভাবক হিসেবে যে নির্দেশ দেবেন, তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করব।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন যারা –

এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন, শামসুর রহমান খান শাহজাহান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোস্তফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- সাবেক সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খান, ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরতিজা হাসান, ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সালাম মিয়া প্রমুখ।

আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য –

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা ও আনেহলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তালুকদার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, এর মধ্য দিয়ে আগামী দিনে টাঙ্গাইলের রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ সৃষ্টি হবে।

আওয়ামী লীগ নামধারী হাইব্রিড ও লুটেরা নেতাদের পতন হবে। তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের নিয়ে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

ঘাটাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম লেবু বলেন, সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলার আসামি।

লতিফ সিদ্দিকী মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক। তাঁর মতো একজন লোকের কাছে এমনটা আশা করেননি।

কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাহারুল ইসলাম তালুকদার বলেন, লতিফ সিদ্দিকী এখন দলীয় নীতি-আদর্শের মধ্যে নেই।

তিনি ব্যক্তিগত আদর্শ নিয়ে আছেন।

এবিষয়ে কালিহাতী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের জন্মলগ্ন থেকে একজন প্রবীণ ও পরিক্ষিত নেতা।

আর খান পরিবারেরও আওয়ামী লীগের জন্য ত্যাগ রয়েছে, এটা অস্বীকার করার কিছুই নাই।

আমাদের মহান নেতা শামছুর রহমান খান শাহজাহান স্মৃতি ফাউন্ডেশনের একটি বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দুটি পরিবার একসাথে হয়েছে।

আমি বিশ্বাস করি, উনারা যদি হৃদয় থেকে মিশে থাকে, তাহলে রাজনীতিতে একটি ভাল ও সুন্দর কিছু হবে।

এসময় তিনি বলেন, উনাদের মিলনে হাইব্রিডদের পতন হবে, ত্যাগীদের মূল্যায়ন হবে।