টাঙ্গাইলের শতাব্দপ্রাচীন মসজিদ পরিত্যক্ত ঘোষণার পায়তারা! এলাকাবাসীর ক্ষোভ

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের পাছ বেথইর গ্রামের শতাব্দপ্রাচীন দক্ষিণপাড়া পুরাতন জামে মসজিদটি পরিত্যক্ত ঘোষণার মাধ্যমে স্থানান্তরের পায়তারা চালাচ্ছে কতিপয় ব্যক্তি। এ নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জানাগেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে পাছ বেথইর সহ আশপাশের ৮-১০ গ্রামে কোন মসজিদ না থাকায় স্থানীয় বুজরক আলী ও তার স্ত্রী আজিরণ বিবির ওয়াক্ফ করে দেয়া ৬ শতাংশ ভূমির উপর ছাপড়া ঘর নির্মাণ করে মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরে পাকিস্তান আমলে ছাপড়াঘরের স্থলে একতলা পাকা ভবন নির্মাণ করা হয়। ওই মসজিদে গালা ইউনিয়নের তারাবাড়ি, আগ বেথইর, খয়রাহাটি, খল্লদ বাড়ি সহ আশপাশের গ্রামের মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতেন। বর্ষা মৌসুমে ওইসব এলাকার লোকজন নৌকাযোগে এসে মসজিদে নামাজ আদায় সহ ধর্মীয় অন্যান্য কাজকর্ম করতেন।

স্থানীয় মুসল্লি মো. জালাল মন্ডল (৮৫), মো. বেল্লাল হোসেন (৭৬), মো. হেলাল উদ্দিন (৬৫), মো. শাকিল আহাম্মেদ (১৮), আবু হাসান জিহাদ (১৯) অভিযোগ করেন, বিগত ২০০৩ সালে মসজিদ পরিচালনার জন্য স্থানীয় মো. হাফিজ সরকারকে সভাপতি, মো. মতিউর রহমানকে সেক্রেটারী ও মো. আজাহার মন্ডলকে কোষাধ্যক্ষ করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের দীর্ঘ ১৭ বছরেও কমিটিতে কোন পরিবর্তন না এনে মসজিদ পরিচালনা করেছে। ওই কমিটির সময়ে একাধিকবার সরকারি-বেসরকারি দান-অনুদান এলেও মসজিদের অবকাঠামো উন্নয়নে কোন টাকা ব্যয় করা হয়নি। মুসল্লিরা মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব বার বার জানতে চাইলেও উপস্থাপন করা হয়নি। বরং কমিটির কর্মকর্তারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে মসজিদটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার জন্য টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসকের কাছে গোপনে একটি আবেদন করেছেন। তারা মসজিদটি স্থানান্তর করে পাছ বেথইর বাজারে অপর একটি নতুন মসজিদের ১০০ গজের মধ্যে মো. নজরুল ইসলাম মন্ডলের ভূমি ও সরকারি খাস ভূমিতে স্থান নির্ধারণ করে সাইনবোর্ড ঝুঁলিয়ে দেয়।

বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় মুসল্লিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) সন্ধ্যায় মসজিদে অনুষ্ঠিত এক সভায় মুসল্লিরা মো. মাইন উদ্দিনকে সভাপতি ও মো. হেলাল উদ্দিনকে সেক্রেটারী করে ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি নতুন পরিচালনা কমিটি গঠন করে।

পাছ বেথইর দক্ষিণপাড়া পুরাতন জামে মসজিদের ইমাম মওলানা মো. ইসমাইল হোসেন জানান, পুরাতন কমিটির কর্মকর্তারা তাকে নিয়োগ করলেও তিনি কয়েক মাস যাবত যোগদান করেছেন। মসজিদের অবকাঠামো সংস্কার করা খুবই জরুরি।

মসজিদ পরিচালনার নতুন কমিটির সভাপতি মো. মাইন উদ্দিন জানান, পুরাতন কমিটির কর্মকর্তারা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলকভাবে মসজিদটি স্থানান্তর করার পায়তারা করছে। এজন্যই দীর্ঘ দিনেও তারা মসজিদের অবকাঠামোগত কোন উন্নয়ন করেনি। আয়-ব্যয়ের কোন হিসাবও মুসল্লিদের দেয়নি বরং মসজিদের নামে ওয়াক্ফ করে দেয়া দলিল-দস্তাবেজ গুলো দেয়ার আশ্বাস দিলেও দিচ্ছেনা। মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনে আমরা আরো জমি দেব, তবুও আমরা চাই মসজিদটি বর্তমান জায়গায়ই থাকুক।

পুরাতন কমিটির সেক্রেটারী মো. মতিউর রহমান জানান, মসজিদের বর্তমান ভবনটি সংস্কার করার কোন সুযোগ নেই বিধায় নতুন স্থানে নতুন ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে নতুন নামে নতুন মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা হবে তবুও পুরাতন মসজিদের উন্নয়ন নয়।

গালা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের সদস্য মো. জয়নুল আবেদীন জানান, সদিচ্ছা ও উদ্যোগের অভাবে শতাব্দি প্রাচীণ মসজিদটির অবকাঠামো উন্নয়ন করা হয়নি। ঐতিহ্যগত কারণেই পুরাতন মসজিদটির উন্নয়ন করা জরুরি। নতুন মসজিদ নির্মাণের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।