করোনার ভয় দেখিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীর কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ; থানায় মামলা

টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার যদুরপাড়া গ্রামের এক প্রবাসীর স্ত্রীকে করোনার ভয় দেখিয়ে ১ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এবিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী রেহেনা পারভীন বাদী হয়ে চাঁদা দাবীকারী তোফাজ্জল হোসেন তুহিনের নামে কালিহাতী থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার নম্বর – ০২, তারিখ: ০১-০৪-২০২০।

তোফাজ্জল হোসেন তুহিন (৪৫) ইংরেজী দৈনিক নেক্সট নিউজ এর সম্পাদক ও স্থানীয় তালেমন হযরত আলী মৎস্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউট কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও অধ্যক্ষ।

ঘটনার বিবরণে রেহেনা পারভীন জানান, গত সোমবার (৩০ মার্চ) সকাল অনুমানিক ১০টার দিকে আমাদের বাড়িতে এসে এক লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তখন আমি তার কাছে জানতে চাই, কি কারণে টাকা দিতে হবে? তখন তুহিন বলেন, তোমার স্বামী বিদেশ থাকে, এজন্য টাকা দিতে হবে। টাকা না দিলে পুলিশ ধরে নিয়ে মেরে অন্য জায়গায় ফেলে দেয়। তখন আমি বলি আমার স্বামী থেকে তো আসেই নাই, আমি টাকা দেব কেন?

এরপর তোফাজ্জল হোসেন তুহিন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এই মিথ্যে অভিযোগ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, এসিল্যান্ড ও কালিহাতী থানার অফিসার ইনচার্জ সরেজমিনে তদন্ত করেন। তখন প্রবাসীর পরিবার ও এলাকাবাসী জানান ওমান প্রবাসী হাফিজুর রহমান দুলাল দেশে আসেন নি। ঘটনার সত্যতা প্রমাণের জন্য তোফাজ্জল হোসেন তুহিনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আসেন ইউএনও। এরপর বেলা ৩টার দিকে তুহিন রেহেনা পারভীনের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে আবারও টাকা দাবি করেন ও না দিলে পুলিশ দিয়ে হেনস্থা করার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের ছেলে রুহুল আমিন রাসেল বলেন, তুহিন আমাদের বাড়িতে এসে আমার আব্বা এসেছে বলে মিথ্যে অভিযোগ করে। সেই সঙ্গে আমাদের কাছে ১ লক্ষ চাঁদা দাবি করে। না দিলে সে পুলিশের ভয় দেখায়।

এ ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার বলেন, সে সাংবাদিক ও শিক্ষক। তার কাছ থেকে আমরা এমন মিথ্যে অভিযোগ আশা করিনি। যেখানে আমরা করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সারাদিন কাজ করে যাচ্ছি, সেখানে এরকম মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগ দিয়ে আমাদেরকে হয়রানি করা মোটেও ঠিক হয়নি। এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আরা নীপা বলেন, তোফাজ্জল হোসেন তুহিন নামে এক ব্যক্তি আমার নিকট একটি অভিযোগ করে বলেন, এক প্রবাসী হোম কোয়ারেন্টাইন নির্দেশনা না মেনে এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ায়। তাকে সে নিজে একাধিকবার সচেতন করার চেষ্টা করলেও সে সেটি না মেনে বাইরে ঘুরতে থাকে।

এসময় তিনি বলেন, আমি করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের একটি জরুরী প্রোগ্রামে ছিলাম। কাজের চাপে আসতে দেরী হতে দেখে ২ ঘন্টার মধ্যে সে ৩ বার কল দিয়ে তাড়া দিতে থাকে। অবশেষে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে কর্মসূচি বাদ রেখে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার, থানা অফিসার ইনচার্জ শামিম আল মামুন সহ প্রোটোকল নিয়ে অভিযুক্তের তথ্যের ভিত্তিতে বিদেশ হতে আগত ব্যক্তির বাড়িতে উপস্থিত হই। কিন্তু সেখানে বিদেশ ফেরত কাউকে পাওয়া যায়নি। এমনকি ওই ওই পরিবারের কেউ বিদেশ থেকে আসেনি। পরে আমি একাধিকবার সাংবাদিক তুহিনকে ফোন দিলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কিছু সময় পর তার ফোন চালু হলে সাংবাদিক তুহিনকে অভিযোগের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সে আমার কাজের ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, আপনারা ভালোভাবে তদন্ত না করেই আমার অভিযোগ মিথ্যে প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন। এক পর্যায়ে অশোভন আচরণ ও কথা কাটাকাটি শুরু করে । তখন তোফাজ্জল হোসেন তুহিনকে বিদেশ থেকে আগত ব্যক্তিকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়ে আসি।

এসময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীমা আরা নীপা আরো বলেন, এবিষয়ে প্রবাসীর স্ত্রী রেহেনা পারভীন বাদী তোফাজ্জল হোসেন তুহিনের বিরুদ্ধে একটি চাঁদাবাজি মামলা করেছেন। দেশের এই দূর্যোগপূর্ণ মূহুর্তে মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রশাসনকে ভুল পথে পরিচালিত ও হয়রানি করা মোটেও ঠিক হয়নি।

এবিষয়ে জানতে তোফাজ্জল হোসেন তুহিনের ০১৭২৯৮৩৩৪২১ নম্বরে ফোন দিলে তিনি বলেন, ঐ এলাকা থেকে কিছু লোক আমাকে এই তথ্য দেয় এবং বলে ওমান ফেরত দুলাল আমাদের কথা শুনছে না, বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তুমি বিষয়টি দেখ। তারপর আমি ঐ বাড়িতে যাই। আর যারা আমাকে তথ্য দিয়েছে তারা লিখিত দিবে। এসময় ঐ তথ্যদাতার নাম জিজ্ঞেস করলে তোফাজ্জল হোসেন তুহিন না বলেন নি। তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য রটানো হচ্ছে। এসময় তুহিন বলেন, ভাই আজ আমার বিরুদ্ধে সংবাদ করছেন, কাল আপনার বিরুদ্ধে সংবাদ হতে পারে।