বিশেষ প্রতিবেদক : কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে ঈগল এক্সপ্রেসের বাসে ডাকাতি ও ধর্ষণের পর লুন্ঠিত টাকা এবং মুঠোফোনসহ অনান্য জিনিসপত্র বাসের ভেতরেই ভাগাভাগি করে ডাকাতদল।
এসময় এক যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ২০ হাজার টাকা নিয়ে ডাকাত দলের সদস্যদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়; ডাকাতরা একজন আরেকজনের দেহ তল্লাশী শুরু করেন।
এক পর্যায়ে ডাকাত দলের বাসের চালকের আসনে থাকা ডাকাত দলের সদস্য কথাকাটাকাটি দেখার জন্য পেছনে তাকান।
আরো পড়ুন – টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণ মামলায় ৩ আসামি স্বেচ্ছা জবানবন্দি
এসময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে বাসটি টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় রাস্তার পাশে বালুর স্তুপের মধ্যে কাত হয়ে পড়ে যায়।
পুলিশের রিমান্ডে থাকা গ্রেপ্তারকৃত রাজা মিয়া এবং শুক্রবার গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুল আওয়াল ও নুরনবী জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাসে থাকা কবলিতদের বক্তব্য –
এছাড়া মামলার বাদি ওই বাসের যাত্রী হেকমত আলীর স্ত্রী জেসমিন আরা বলেন, এক সন্তানকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথা নিচু করে সৃষ্টিকর্তার নাম নিচ্ছিলাম।
সামনে আরেক সিটে আমার মা বসেছিলেন তার সন্তানকে নিয়ে। তার হাত, চোখ, মুখ বাঁধা ছিল।
আরো পড়ুন – সাগরদিঘিতে মানববন্ধনে চেয়ারম্যানের হামলা অভিযোগ, সংঘর্ষ-ভাঙচুর, পুলিশের গুলি-টিয়ারশেল
ডাকাত দল সব কাজ শেষ করার পর একে অপরকে ডাকাডাকি করেন।
ডাকাত দলের সরদারকে তারা ‘কাকা’ বলে সম্বোধন করছিলেন। মাঝে মধ্যে নুরু, সাব্বির, রকি নামেও ডাক দিচ্ছিল।
রাত ৩টার দিকে ডাকাতরা টাকা, মোবাইল ও স্বর্ণালংকার নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি শুরু করে। বাসের ভেতরে ভাগাভাগি নিয়েও তাদের মধ্যে বাক-বিতন্ডা হয়।
একপর্যায়ে সড়কের এক পাশে বাসটি কাত হয়ে যায়। পরে ডাকাতরা দ্রুত নেমে পালিয়ে যায়।
বুধবার রাত ৯টার দিকে বিআরটিসির গাড়িতে পুলিশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে তাদের কুষ্টিয়া পাঠিয়ে দেয়।
পুলিশ সূত্রে জানা যায় –
পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, বাসটি ঢাকার দিকে মির্জাপুরের গোড়াই পর্যন্ত গিয়ে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ইউটার্ন নিয়ে ওই ডাকাতদল আবার টাঙ্গাইলের দিকে যাত্রা শুরু করে।
আরো পড়ুন – আগুন আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে বাসাইলের জশিহাটি গ্রামের মানুষের
এক পর্যায়ে লুন্ঠিত টাকা ও মুঠোফোনের সংখ্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এক সদস্য ২০ হাজার টাকা একজন যাত্রীর কাছ থেকে ছিনিয়ে নেন এবং ওই টাকা লুকিয়ে ফেলেন বলে অভিযোগ করেন কয়েকজন ডাকাত; পরে একজন আরেকজনের দেহ তল্লাশী শুরু করেন।
এসময় চালকের আসনে গ্রেপ্তারকৃৃত রাজা মিয়া ছিলেন না, ডাকাত দলের আরেক সদস্য বাস চালাচ্ছিলেন।
তিনি পেছন দিকে তাকিয়ে ভালো করে তল্লাশী করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। এসময় বাস রাস্তার পাশে কাত হয়ে পড়ে যায় বাসটি; এসময় তারা জানালা দিয়ে দ্রুত বের হয়ে পড়েন।
তারা রক্তিপাড়া থেকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে মধুপুরের দিকে দৌড়াতে থাকেন; প্রায় এক কিলোমিটার যাওয়ার পর একটি বাস আসলে সেটিকে সংকেত দিয়ে থামায়।
সেখান থেকে প্রথমে ৩ জন ওই বাসে উঠেন। কিছু দূর যাওয়ার পর এগিয়ে থাকা অন্য সদস্যরা বাসটিতে উঠেন। তারা নিজেদের পরিবহণ শ্রমিক বলে পরিচয় দেন।
দুর্ঘটনা কবলিত বাসটির শ্রমিক বলেও তারা জানান। ওই বাসে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে নেমে পড়েন ডাকাতরা।
আরো পড়ুন – শিহাব হত্যা মামলা : আর কোন আসামি গ্রেপ্তার নাই
পরে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা নিয়ে ডাকাত দলের এক সদস্যের আত্মীয় বাড়ি গিয়ে উঠেন তারা।
সূর্য উঠার পর এক এক করে তারা ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যান।
ডাকাতিকালে তারা ৫টি স্মার্ট মুঠোফোন সেট, ১২/১৩টি বাটনফোন এবং ২০ হাজার ৪০০ শত টাকা লুন্ঠন করে।
যে ২০ হাজার টাকা নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়, সে টাকা শেষ পর্যন্ত আর উদ্ধার করতে পারেননি তারা। সম্পাদনা – অলক কুমার