সৌন্দর্যের দারিদ্র সীমা অতিক্রম -

পৌর উদ্যানেও নির্মিত হচ্ছে পাবলিক টয়লেট!

পৌর উদ্যানে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : একসময় টাঙ্গাইল শহরের শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানটি ছিল শরীর সচেতন বয়স্ক মানুষের হাটার বা ব্যায়ামের জায়গা।

এছাড়াও এই পৌর উদ্যান ছিল শিশু-কিশোরদের খেলার জায়গা, যাদের অনেকেরই খেলাধুলার হাতে খড়ি হয়েছে এখানে।

ইতিমধ্যে শহরের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে নির্মাণ করা হলো মুক্তমঞ্চ।

কিন্তু সেই মুক্তমঞ্চটি হয়ে উঠলো রাজনৈতিক সভা সেমিনারের কেন্দ্রস্থল।

উদ্যানের ভেতরে একের পর এক স্থাপনা নির্মাণ করে প্রায় ২৫ ভাগ জায়গা ভর্তি করে ফেলেছে কর্তৃপক্ষ।

এখন উদ্যানে নেই হাটার জায়গা, নেই শিশু-কিশোরদের কোলাহল।

এখন সেই উদ্যান শুধুই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জায়গা। সারাবছরই চলে ক্ষমতাসীন দল, প্রসাশনের কর্মকাণ্ড।

এর বাইরে যদি সময় পাওয়া যায় কখনো সখনো চলে অন্যান্য রাজনৈতিক দল বা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কর্মকাণ্ড।

এছাড়া সারাবছর পৌর উদ্যানে গাড়ি পার্কিং, ডেকোরেটরের মালামাল মজুত করে রেখে সাধারণ মানুষের হাটাচলা বা বসার জায়গাগুলোও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।

এখন আবার সেখানে গণশৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে আরো ছোট ও সাধারণ মানুষের ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে গেছে উদ্যানটি।

এরকমই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন শহরের সচেতন কিছু মানুষ।

উদ্যানের ইতিহাস – 

শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত উদ্যানটির তত্ত্ববধান করে টাঙ্গাইল পৌরসভা। কবি নজরুল সড়ক ও ক্লাব রোডের পাশে এই উদ্যানের অবস্থান।

ব্রিটিশ আমলে এটি ছিলো পুলিশ প্যারেড ময়দান।

মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের পর ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি কাদেরিয়া বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র জমা নিতে টাঙ্গাইল আসেন তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

ওইদিনই তিনি পুলিশ প্যারেড ময়দানে শহীদ স্মৃতি সৌধের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন।

পরবর্তীতে পৌরসভা নব্বই দশকে সেখানে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।

তখন এর নামকরণ করা হয় শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যান।

উদ্যানটির আয়তন ছিলো প্রায় ৫৬ হাজার বর্গফুট। বিভিন্ন গাছগাছালিতে ভরা উদ্যানে মানুষ অবসরে বিশ্রাম নিতো।

২০১২ সালে পৌরসভা উদ্যানের পূর্বপাশে বড় অংশ জুড়ে মুক্তমঞ্চ, সাজঘরসহ কিছু স্থাপনা নির্মাণ করে।

পরে জেলা পরিষদ মুক্তমঞ্চের পাশে ম্যুরাল তৈরি করে। এসব নির্মাণের কারনে প্রায় ১৮ হাজার বর্গফুট চলে যায়।

এ বছর সড়ক সম্প্রসারণের জন্য উদ্যানের পশ্চিম পাশের প্রায় দেড় হাজার বর্গফুট জায়গা পৌর কর্তৃপক্ষ নিয়ে নেয়।

এখন উদ্যানের পশ্চিম-উত্তর পাশে সাড়ে নয়শ বর্গফুট জায়গা জুড়ে গণশৌচাগার নির্মাণ কাজ শুরু করেছে পৌর কর্তৃপক্ষ।

ফলে প্রায় ৫৬ হাজার বর্গফুটের উদ্যানটির প্রায় ১৯ হাজার বর্গফুট জায়গা মূল উদ্যান থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

এর বাইরেও ক্লাব রোড সম্প্রসারণের জন্য উদ্যানের জায়গা নেওয়া হবে বলে পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি জায়গা নিয়ে মুক্তমঞ্চ করা হয়েছে।

অপরিকল্পিত মঞ্চ নির্মাণের জন্য উদ্যানের বড় অংশ জায়গা অপব্যবহার করা হয়েছে।

এছাড়া নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময় গাছ কাটা হয়েছে। ফলে শহরের মধ্যে ছায়া সুশীতল উদ্যানটি ক্রমেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে শহীদ স্মৃতি পৌর উদ্যানে গিয়ে দেখা য়ায়, মূল উদ্যানে বন বিভাগ আয়োজিত বৃক্ষ মেলা চলছে।

পশ্চিম পাশে শ্রমিকরা মাটি খোড়ার কাজ করছেন।

তারা জানান, গণশৌচাগার নির্মাণের জন্য মাটি খোড়া হচ্ছে।

সচেতন মানুষদের কথা –

উদ্যানে আসা রকিবুল ইসলাম জানান, এ জায়গাটিতে শহরের মানুষ একটু স্বস্তির জন্য আসেন।

কিন্তু দিন দিন এটি ছোট হচ্ছে। মুক্ত বাতাস গ্রহণের স্থান ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে।

থানা পাড়ার সত্তোরোর্ধ বাসিন্দা আমিনুল ইসলাম বলেন, আগে উদ্যানে সকাল বিকাল হাটতে আসতাম। এখনতো উদ্যানে আর হাটার জায়গা নাই।

চায়ের দোকান, অমুক দোকান, তমুক দোকান, তাছাড়া আরো কতো কি রয়েছে। সেজন্য এখন আর আসি না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন বলেন, এখানে যে গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে ব্যবসায়িক স্বার্থে। এটাকে লিজ দিয়ে মোটা একটা টাকা নিবে।

এছাড়া সারাবছরই এখান থেকে একটা আয় হবে, সেই চিন্তা থেকেই এই গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।

নাট্যকর্মী সাম্য রহমান জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সেখানে ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছিলেন তার পাশেই গণশৌচাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি দুঃখজনক।

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজরিত স্থানটি সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। সেই সাথে যত্রতত্র স্থাপনা না করে উদ্যানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন।

পৌর মেয়রের বক্তব্য –

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস এম সিরাজুল হক জানান, উদ্যানে বড় বড় বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়। মানুষের সুবিধার জন্য এর এক পাশে গনশৌচাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর ভিত্তিস্থাপনের স্থানটি গ্রিল দিয়ে ঘিরে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সম্পাদনা – অলক কুমার