মির্জাপুর পৌরসভা নির্বাচন : মেয়র পদে মনোনয়ন দিতে পৌর কমিটিতে কারসাজি

মির্জাপুর প্রতিনিধি : তৃতীয় ধাপে আগামী ৩০ জানুয়ারি এ পৌরসভায় সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় বর্তমান মেয়র সালমা আক্তার শিমুলকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে করা হয়েছে এক অভিনব কারসাজি।

আর সেই অভিযোগে নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা যায় –

সালমার স্বামী সাহাদত হোসেন সুমন মির্জাপুর পৌরসভার মেয়র ছিলেন। গত ১১ ফেব্রুয়ারি তাঁর মত্যুতে মেয়র পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়।

গত ১০ অক্টোবর উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছয়জন প্রার্থী থাকলেও সবাই নিজেদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে শিমুলকে পৌর মেয়র নির্বাচিত করেন।

সাহাদত হোসেন সুমন টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) একাব্বর হোসেনের চাচাতো ভাই।

২০১১ সালে মির্জাপুর পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে ফরহাদ উদ্দিন আছুকে সভাপতি ও মো. আলম মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে পৌর কমিটি ঘোষণা করা হয়।

পরে সভাপতি ও সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করে ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের অনুমোদন নেন।

এই কমিটিতে মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা হিসেবে সাবেক পৌর কাউন্সিলর মমতাজ বেগমের নাম রাখা হয়। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে শিমুল ছাড়াও পাঁচজন দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী। সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের নামের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গোপনে পৌর কমিটি থেকে মমতাজের নাম বাদ দিয়ে সালমার নাম অন্তর্ভুক্তসহ একই তারিখে কমিটির অনুমোদন দেখানো হয়। এ বিষয়টি জানেন না পৌর কমিটির সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু।

আগামী পৌরসভা নির্বাচনে শীর্ষ নেতাদের পছন্দের মেয়র প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পৌর আওয়ামী লীগের কমিটিতে এই কারসাজি করা হয়েছে।

মির্জাপুর পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে আ’লীগের মোট প্রার্থী –

এই পৌরসভায় মেয়র পদে সালমা আক্তার শিমুল ছাড়াও উপজেলা ও পৌর আওয়ামী লীগের সদস্য মির্জাপুর সদর ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা শহীদুর রহমান শহিদ; উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন মনি; পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু; উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল হোসেন; উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাজহারুল ইসলাম শিপলু আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী।

অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে কয়েকজনের কথা –

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা জানান, মির্জাপুর আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র রাজনীতি শুরু হয়েছে। জনপ্রিয়তা থাকার পরও বিভিন্ন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ও আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের পদ পদবি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থার কারণে তৃণমুলে দলের ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে।

বর্তমান মেয়র সালমা আক্তার শিমুল এমপি একাব্বর হোসেনের চাচাতো ভাই প্রয়াত মেয়র সাহাদত হোসেন সুমনের স্ত্রী।

তাকে দলীয় মনোনয়ন পাইয়ে দিতে পৌর কমিটিতে এই কারসাজির আশ্রয় নেয়া হয়েছে বলে তারা জানান।

উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী রওশন আরা বেগম জানান, পৌর আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মমতাজ বেগম বলে তিনি জানেন।

সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমতাজ বেগম ক্ষোভ ও দুঃখের সাথে জানান, পৌর আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে তাকে বাদ দেয়া হয়েছে; বিষয়টি তিনি জানেন না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক সময় আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়েছি; এখন নিজের অজান্তেই পদ চলে যায়, বিষয়টি খুব কষ্টের।

বর্তমান পৌর মেয়র সালমা আক্তার শিমুলকে মুঠোফোনে তিনি আওয়ামী লীগের কোন পদে আছেন; জানতে চাইলে একটু সময় নিয়ে মির্জাপুর পৌর আ’লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা বলে জানান।

পৌর আ’লীগের দায়িত্বশীলদের বক্তব্য – 

পৌর আ’লীগের সভাপতি ফরহাদ উদ্দিন আছু জানান, পৌর কমিটির মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা মমতাজ বেগম। মমতাজের স্থলে শিমুলের নাম অর্ন্তভুক্ত করে একই তারিখে দুই কমিটি অনুমোদনের বিষয়টি কিভাবে হয়েছে আমার জানা নেই।

মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ বলেন, একই তারিখে পৌর আওয়ামী লীগের দুই কমিটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিনা; মনে পড়ছে না। তবে আমি দুটো কপি দেখলেই বলতে পারবো; কোনটা আসল, আর কোনটা নকল। এসময় তিনি দপ্তর সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. জহিরুল হক মুঠোফোনে বলেন, পদে থাকা কোন ব্যক্তি মারা গেলে বা দল থেকে পদত্যাগ করলে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

পরে কমিটিতে সংযুক্ত নতুন ব্যক্তির নাম কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়; পৌর কমিটিতে কিভাবে নাম পরিবর্তন হয়েছে তা আমার জানা নেই। সম্পাদনা – অলক কুমার