আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

সুদের ব্যবসা, ভূমি দস্যুতা ও আধিপত্য বিস্তার ধরে রাখাই মুল লক্ষ্য

আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘন্টা অবরোধের প্রথম দিনে আওয়ামী লীগের অবরোধ বিরোধী মিছিলে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) দুপুরে জেলা পরিষদ রোডস্থ জেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন ইয়াকুবের মোটর গ্যারেজের সামনে সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটে।

আরো পড়ুন – বিএনপি নেতা “সোনা” এখন আওয়ামী লীগে

একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, বিএনপির অবরোধের বিরোধী মিছিলের কথা হলেও মূলত আধিপত্য বিস্তার, সুদের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ভূমি দস্যুতা নিয়ে দীর্ঘ দিনের শত্রুতার বহিপ্রকাশ এই ঘটনা।

তবে এলাকার কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।

আহতরা হলেন- টাঙ্গাইলে পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল ফকির (৫৫) ও তার ছেলে ইব্রাহিম ফকির (২৩)।

অপরদিকে ওই ওয়ার্ডের সভাপতি হুমায়ুন রশিদ আকন্দ সোনার মামাতো ভাই মো. আব্দুল্লাহ আকন্দও (৩২) আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু সেতু-ঢাকা মহাসড়কে বিএনপির ডাকা ৭২ ঘন্টার অবরোধ বিরোধী মিছিল করতে ৩ নং ওয়ার্ডের সভাপতি মো. হুমায়ুন আকন্দ সোনা এবং সাধারণ সম্পাদক মো. হেলাল ফকির তাদের অনুসারীদের নিয়ে যান।

অবরোধ বিরোধী মিছিল শেষে ফেরার পথে শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে চলন্ত অবস্থায় সাধারণ সম্পাদক হেলাল ফকিরের অনুসারীরা সভাপতি হুমায়ুন রশিদ আকন্দ সোনার মোটরসাইকেল বহরের কর্মীদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি করে।

এতে দুই পক্ষের কয়েকটি মোটরসাইকেল রাস্তায় পড়ে যায় ও কয়েকজন কর্মী সামান্য আহত হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতা করে দেন।

মঙ্গলবার দুপুরে ওই ঘটনার জের ধরে আদালত প্রাঙ্গণে ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক হেলাল ফকিরের কথিত সেরেস্তার সামনে সভাপতি হুমায়ুন রশিদ আকন্দ সোনার মামাতো ভাই মো. আব্দুল্লাহ আকন্দকে আটকে রেখে মারপিট করা হয়।

খবর পেয়ে সভাপতির অনুসারীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে হেলাল ফকিরের অনুসারীদের উপর হামলা করে।

উভয়পক্ষের পাল্টাপাল্টি হামলায় সাধারণ সম্পাদক হেলাল ফকির, তার ছেলে ইব্রাহিম ফকির এবং সভাপতির মামাতো ভাই মো. আব্দুল্লাহ আকন্দ আহত হন।

কে কি বলছেন –

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাউজিং এলাকার বেশ কয়েকজন জানান, এই এলাকায় এই দুইজনেরই প্রচ্ছন্ন খবরদারি চলে।

তারা সুদের ব্যবসা, জমির দালালি পরিচালনা করে, আর সেই ব্যবসা পরিচালনা করতে তাদের রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।

৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন রশিদ আকন্দ সোনা জানান, অবরোধ বিরোধী দলীয় মিছিলে তিনি শতাধিক মোটরসাইকেলসহ অনুসারীদের নিয়ে অংশগ্রহণ করেন।

আরো পড়ুন – সাংসদের বাসা থেকে স্বর্ণালংকার চুরি মামলায় দুই নারী গৃহকর্মী কারাগারে

প্রথম ঘটনাটি তাৎক্ষণিকভাবে পৌর মেয়র সমাধান করে দেন। পরে তিনি বাড়িতে যাওয়ার সময় প্রতিপক্ষরা তার উপর হামলা করে।

হামলার পরে তাকে রক্ষা করার জন্য তার অনুসারীরা উল্টো হামলা করে।

পুলিশ কি বলছে –

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় দুই পক্ষের কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরো পড়ুন – নিজ আসনের দলীয় অখন্ডতা ধরে রাখতে পারেন নি কৃষিমন্ত্রী

উল্লেখ্য, স্থানীয় পর্যায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছে।

ইতোপূর্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের ছেলে ইব্রাহিম ফকির একই ওয়ার্ডের সভাপতির ভাতিজাকে কুপিয়ে আহত করে।

ওই ঘটনা থেকে উভয়ের মধ্যকার বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।