মধুপুরে চলন্ত বাসে ধর্ষণ ও ডাকাতি

১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি

বাসে ধর্ষণ

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইলের মধুপুরে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

এতে ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর মধ্যে দুই আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের বিচার কিশোর আদালতে করার জন্য ‘দোষীপত্র’ দেওয়া হয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা (দক্ষিণ) পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন গত ৩১ মে আদালতে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছেন।

বিষয়টি জানাজানি হয় আজ মঙ্গলবার।

টাঙ্গাইলের আদালত পুলিশের পরিদর্শক তানভীর আহমেদ বলেন, আগামী ১০ আগস্ট মামলাটির তারিখ ধার্য রয়েছে।

ওই দিন অভিযোগপত্রটি ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে বিচারিক আদালতে বদলি করা হবে।

গত বছরের ৩ আগস্ট কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।

এ সময় বাসটি মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়।

ওই ঘটনায় বাসের যাত্রী হেকমত আলী বাদী হয়ে ওই দিনই মধুপুর থানায় মামলা করেন।

পরে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে।

ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনায় যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হচ্ছেন টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার বল্লা গোরস্থান পাড়া গ্রামের রাজা মিয়া (৩২), কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ধনারচর পশ্চিম পাড়ার নুরুননবী হোসেন (২৪), খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার আব্দুল মান্নান (২০), মধুপুরের ধলপুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান ওরফে মুন্না ওরফে রতন (২২), গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার ছোট কাঞ্চনপুর গ্রামের আব্দুল আউয়াল (৩১), সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার দশসিকা গ্রামের রাসেল তালুকদার (৩০) ও একই গ্রামের আসলাম তালুকদার (১৯), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার কাইতলা গ্রামের মো. আলাউদ্দিন (২৪), ঢাকার সাভার উপজেলার গোহাইল বাড়ি দক্ষিণ পাড়ার জুলহাস বাবু (২৭)।

অপর দুই আসামি অপ্রাপ্তবয়স্ক। তাদের বিরুদ্ধে শিশু–কিশোর আদালতে বিচারের জন্য পৃথক দোষীপত্র জমা দেওয়া হয়েছে।

মামলার আসামির সবাই ঘটনার পরপরই গ্রেপ্তার হন।

তাঁরা সবাই দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে সবাই কারাগারে আছেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির তিনটি ধারায় ডাকাতি, লুটপাট ও ডাকাতির মালামাল উদ্ধারের অভিযোগ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং ধর্ষণে সহায়তার অভিযোগ আনা হয়েছে।

তদন্তকর্মকর্তার বক্তব্য –

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ওই বাসের এক নারী যাত্রী ডাকাত দলের কয়েকজন সদস্য কর্তৃক ধর্ষণের শিকার হন।

ঘটনার পর ওই নারীর ডাক্তারি প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

পরে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আসামিদের নমুনা সিআইডির প্রধান ডিএনএ অ্যানালিস্টের কাছে পাঠানো হয়।

ধর্ষণের শিকার নারীর কাছ থেকে সংগৃহীত আলামতের সঙ্গে আসামি রাজা মিয়া, নুরুননবী হোসেন, আব্দুল মান্নান ও মাহমুদুল হাসান মুন্নার ডিএনএর মিল রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৩ আগস্ট কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহনের বাসটি রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জ বনপাড়া রোড এলাকায় পৌঁছে।

সেখানে আধা ঘণ্টা একটি হোটেলে খাবারের বিরতি দেয়। পরে পুনরায় ঢাকার দিকে যাত্রা শুরু করে। পথে যাত্রী বেশে ডাকাত দলের সদস্যরা বাসটিতে ওঠে।

বাসটি রাত দেড়টার দিকে দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া এলাকায় পৌঁছালে যাত্রী বেশে ডাকাতেরা অস্ত্রের মুখে চালককে সরিয়ে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয়।

পরে যাত্রীদের জিম্মি করে টাকা, মুঠোফোন, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়।

ডাকাতির সময় এক নারী যাত্রীকে পেছনের সিটে নিয়ে কয়েকজন ধর্ষণ করেন। ঘটনাটি ওই সময় সারা দেশে আলোচিত হয়। সম্পাদনা – অলক কুমার