টাঙ্গাইল শহর আ’লীগ সহ-সভাপতি বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা

ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়নি কিন্তু কিশোরী গর্ভবতী!

টাঙ্গাইল শহর আ’লীগ সহ-সভাপতি বড় মনি

নিজস্ব প্রতিবেদক : টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগ সহ সভাপতি ও জেলা বাস-কোচ-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক কিশোরী।

ধর্ষণের ফলে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।

বুধবার রাতে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলাটি দায়ের করা হয়। মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।

গোলাম কিবরিয়া টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ ছোট মনিরের বড় ভাই।

বিকালে টাঙ্গাইলের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেশকে জান্নাত রিপা ভিকটিম ২২ ধারার জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন।

এর আগে ওই কিশোরী নিজে বাদি হয়ে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করেছেন, বড় মনি তাদের আত্মীয় এবং পূর্ব পরিচিত; হোয়াটস অ্যাপে তাদের কথা হতো।

ওই কিশোরীর ভাইয়ের সাথে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ হয়। ওই কথা গোলাম কিবরিয়া জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন।

পরে গত ১৭ ডিসেম্বর শহরের আদালত পাড়ায় বড় মনির নিজের বাড়ির পাশে একটি ১০ তলা ভবনের চতুর্থ তলা ফ্লাটে যেতে বলেন।

সেখানে যাওয়ার পর শারিরীক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। রাজি না হওয়ায় তার মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন।

প্রায় তিন ঘন্টা পর কক্ষে প্রবেশ করে জোড়পূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণ শেষে কারো কাছে এই ঘটনা প্রকাশ করতে নিষেধ করেন।

প্রকাশ করলে প্রাণ মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন।

তারপর প্রতিনিয়ত তাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে এবং প্রথমবার ধর্ষণের সময় তোলা ছবি দেখি প্রতিনিয়ত ধর্ষণ করতো।

পুলিশের ভাষ্য –

টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া পিপিএম মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পরিদর্শক (তদন্ত) মো. হাবিবুর রহমানকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

ওই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও জবানবন্দি লিপিবদ্ধের জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।

ডাক্তারের মন্তব্য –

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান বলেন, ওই কিশোরীর শরীরে প্রাথমিকভাবে কোন নির্যাতনের আলামত পাওয়া যায়নি।

তার সোয়াপ সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে ওই কিশোরী গর্ভবতী বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

অধিকতর পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গাইনী বিভাগের জুনিয়র কনসালটেন্ট লুৎফুন্নাহারকে প্রধান করে তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড করা হয়েছে।

এই বোর্ড ওই কিশোরীর ডাক্তারী পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেশ করবেন।

মামলায় যা উল্লেখ করা হয়েছে –

মামলায় তিনি উল্লেখ করেন, এই ধর্ষণের ফলে তিনি অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন।

এ কথা গোলাম কিবরিয়াকে জানালে তাকে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ ও হুমকি দিতে থাকেন।

কিন্তু সন্তান নষ্ট করতে রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে গোলাম কিবরিয়া তার শ্বশুড়বাড়ী আদালত পাড়ায় তুলে নিয়ে যান।

সেখানে গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। রাজি না হওয়ায় ওই বাসায় এক কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখে।

পরে তাকে সেখানে আবার ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী তাকে মারপিট করে। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

পরে রাত ৩টার দিকে বাসায় পৌছে দেন। তারপর থেকে তাকে নানা হুমকি দেয়া হতো।

শারিরীক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন।

বড় মনি যা বললেন –

মামলা প্রসঙ্গে গোলাম কিবরিয়া বড় মনি মুঠোফোনে অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার ভাই টাঙ্গাইল-২ আসনের সংসদ সদস্য সেজন্য আমাদের প্রতিপক্ষরা রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য ওই মেয়েকে দিয়ে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা দায়ের করিয়েছে।

তিনি আরও বলেন ওই মেয়ে আমার স্ত্রীর স্বজন এবং সে মাদকসেবী হওয়ায় এজন্য আমার স্ত্রী তাকে মৌখিক শাসন করেছে।

সুষ্ঠু তদন্ত করলেই প্রকৃত সত্য বেড়িয়ে আসবে। এ হয়রানী মূলক ঘটনার দৃষ্টান্ত শাস্তি দাবী জানাই।  সম্পাদনা – অলক কুমার