নাগরপুরে ফসলি জমির মাটি বিক্রি, উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে জমি

নাগরপুর প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি বিক্রিতে মেতেছে মাটিখেকো দুর্বৃত্তরা।

জমির মালিককে ভয় বা প্রলোভন দেখিয়ে এই সব জমির মাটি কেটে বিক্রি করছে তারা।

এর ফলে জমির উৎপাদন ক্ষমতা হারাচ্ছে জমি, আর জেলার খাদ্য উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষি বিভাগ।

ফসলি জমির উর্বর অংশ বা টপ সয়েল কেটে বিক্রি রোধে প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছে কৃষি সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সারা বছরই মাটিখেকোরা অবৈধ মাটি বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উৎপীড়নে দিশাহারা ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, নাগরপুর উপজেলার মানড়া, কেদারপুর, দেইল্লা, কাশাদহ, পাঁচতারা, নন্দপাড়া, ভুগোলহাট, দপ্তিয়র, ঘুনিপাড়া, সলিমাবাদ, গয়হাটা এলাকায় জমির মাটি কাটা হচ্ছে।

বিশেষ করে ভুগোলহাট বাজারের পশ্চিম পাশে মেসার্স আলিফ এন্ড রাজু এন্টারপ্রাইজ ও মানড়ার ইউপি সদস্য আরিফ, মাটি ব্যবসায়ী রশিদ ও বজলুর হক পীরসহ বিভিন্ন এলাকার মাটি বিক্রির চক্র ইটাভাটার মালিকদের কাছে শত শত বিঘা কৃষি জমির মাটি তুলে দিয়ে আবাদি জমি ধ্বংস করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ।

উপজেলার বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সক্রিয় সিন্ডিকেট প্রশাসন ও রাজনৈতিক মহল ম্যানেজ করে মাটি বিক্রির ব্যবসা অবাধে চালায় বলে ভূক্তভোগীদের অভিযোগ।

এলাকাবাসীর দাবি, পুকুর খননে কথা বলে শত শত বিঘা আবাদি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছে বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতা সিন্ডিকেট।

অন্যদিকে কৃষি কাজের জন্য ভারত থেকে আমদানি করা মাহেন্দ্র ট্রাক্টর দিয়ে মাটি আনা-নেয়ার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে।

ভূক্তভোগীদের কথা –

এ বিষয়ে সিংজোরা গ্রামের অটোরিক্সা (সিএনজি) চালক আবদুস সালাম ও ধনাইল গ্রামের রিক্সাচালক করিম (ছদ্ম নাম) ভূগোলহাটে একটি চা স্টলে আলাপকালে বলেন, রাস্তাঘাট যতই ঠিক করা হোক না কেন, তাতে কোন লাভ নেই; কারণ মাটি বিক্রি বন্ধ না হলে ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ হবে না।

হালচাষের ট্রাক্টর রাস্তায় সবসময় চলাচলের কারণে সড়কের পিচ উঠে গর্তের সৃষ্টি হয়। কাঁচা সড়ক ভেঙে বড় বড় গর্ত হয়; যা দেখার ও বলার কেউ নেই।

ভূক্তভোগী কৃষক মানড়া গ্রামের শাজাহান ও কেদারপুরের হোসন মিয়া বলেন, ফসলি জমির মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাতে তৎপর সঙ্গবদ্ধ চক্র।

তারা সারা বছর মাটি বিক্রি করলেও অদৃশ্য কারণে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি; বরং প্রভাবশালীদের চাপের মুখে পরে নাজেহাল হতে হয় অভিযোগ বা প্রতিবাদকারীদের।

বিভিন্ন স্পটগুলোতে গিয়ে মাটি ব্যবসায়ীদের কাছে ফসলি জমির মাটি কাটার অনুমোদনের বিষয়টি জানতে চাইলে তারা অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি।

কর্তৃপক্ষের কথা –

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, নাগরপুরে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ২১,৫৩০ হেক্টর।

যার মধ্যে এক ফসলি জমি ১৮৪০ হেক্টর, দুই ফসলি জমি ১২,৩৬৫ হেক্টর, তিন ফসলি জমি ৭৩২৫ হেক্টর।

কিন্তু বর্তমানে পুকুর খনন ও মাছ চাষের কথা বলে প্রতিদিন প্রায় ৩শ’ বিঘা কৃষিজমির মাটি কেটে বিক্রি করা দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা।

এ বিষয়ে নাগরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার সিফাত-ই-জাহান বলেন, বেশ কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে বিগত কয়েক দিনে আমি ও সহকারী কমিশনার মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

পরবর্তীতে এধরনের আইনের ব্যত্যয় ঘটলে এবং তা যদি আমার অধিক্ষেত্রের মধ্যে হয় তবে অবশ্যই আইনুগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।