বাসাইলে ঝিনাই নদীতে বালু উত্তোলন, হুমকির মুখে সেতু-স্বাধীনতা স্তম্ভ

বিশেষ প্রতিবেদক : স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মহল ঝিনাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন ও বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু উত্তোলন করার কারনে হুমকির মধ্যে পড়েছে একটি সেতু, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের একটি স্মৃতিস্তম্ভ।

এছাড়াও নদীর দু’পাড়ের মানুষের বসত ভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলছে শত শত ট্রাক আর বেকু মেশিনের এই কর্মযজ্ঞ।

জানা যায়, টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার কাশিল ইউনিয়নের নথখোলা এলাকা দিয়ে বয়ে গেছে ঝিনাই নদী।

এ নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু, দু’পাশে রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ; আর নদীর দু’পাড়ে রয়েছে বসতবাড়ি ও ফসলী জমি।

বিগত বছরে এ নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন করার ফলে ইতিমধ্যে একটি শহীদ মিনার নদীগর্ভে বিলীন ও একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাংশ এবং নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে স্থানীয়রা।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঝিনাই নদী থেকে অবাধে বালু উত্তোলন আর বিক্রি করছে একটি মহল।

এ নিয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেনা ভুক্তভোগীরা। তাদের অভিযোগ কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক ও আওয়ামী লীগের নেতা নাসিরের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ একটি চক্র অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকার বালু বিক্রি করছে।

ভূক্তভোগীদের কথা –

ভূক্তভোগীদের স্থানীয় ওমর খান নামের এক ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক জানান, তার তিন বিঘা ফসলি জমির মধ্যে দুই বিঘার মাটি কেটে নিয়ে গেছে। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হচ্ছেনা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়দের অনেকে অভিযোগ করেন, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় দু’টি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল।

এর মধ্যে এক পক্ষে স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি। অপর পক্ষে রয়েছে স্থানীয় সরকারদলীয় এক নেতা।

ইতিপুর্বে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে কোটি টাকার বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে।

কিন্ত নিজেদের স্বার্থে অতি সম্প্রতি এ দু’টি গ্রুপ সমঝোতায় পৌঁছে যায়। তারা একত্রিত হয়ে বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়।

এ চক্রটি গড়াসিনে একটি স্কুলের মাঠ ভরাটসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে মাটি ফেলার কথা বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমতি নেয়। আর এর আড়ালেই শত শত ট্রাক বালু প্রতিদিন বিক্রি করছে তারা।

এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা রাজিকের মোবাইল ফোনে (০১৭৪২০৮৮৬৬৬) বার বার চেষ্টা করলেও সে কল রিসিভ করেননি।

অন্য একটি সুত্রে জানায়, এ চক্রটি টাঙ্গাইলের এক মন্ত্রীর স্বশুরবাড়ির এলাকায় একটি বিদ্যালয়ের মাঠ মাটি দিয়ে ভরাটসহ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাটি ফেলার কথা বলে ডিও লেটার নেয়।

ডিও লেটারের অন্তরালে প্রতিদিন বিক্রি করছে লাখ লাখ টাকার মাটি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বক্তব্য –

ঝিনাই নদীতে বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে চাইলে বাসাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনজুর হোসেন সাংবাদিকদের জানান, তারা মাটি কাটতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের থেকে অনুমতি নিয়ে এসেছে।

একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন বাসাইলের সহকারী কমিশনার (ভুমি) মারিয়াম নুরেন।

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা আমার বিষয় না, এটা জেলা প্রশাসকের বিষয়।

বাসাইলের কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উন্নয়ন কাজের জন্য এই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে আমি শুনেছি।

আর যারা বালু উত্তোলন করছে তারা জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে অনুমতি নিয়েছে।