নির্যাতনের অভিযোগে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের এসপিসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা

ডেস্ক নিউজ :  চুরির অপবাদ দিয়ে এক পরিচ্ছন্ন কর্মীকে পাশবিক ও অমানবিক নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের (পিটিসির) পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।

পুলিশ সুপারের নির্দেশে ঐ পরিচ্ছন্নতা কর্মীকে তিনদিন থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালিয়েছেন মির্জাপুর থানার দুই পুলিশ সদস্য।

ওই দুই পুলিশ সদস্য হলো, এসআই মো. আবুল বাশার মোল্লা এবং এএসআই মেহেদী হাসান।

এমন অভিযোগ করেছেন নির্যাতিত পরিচ্ছন্ন কর্মী মো. ফরিদ মিয়া (৩০)।

নির্যাতিত পরিচ্ছন্ন কর্মী মো. ফরিদ মিয়া পুলিশ সুপার ও দুই পুলিশ অফিসারকে আসামী করে টাঙ্গাইলের বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে (মির্জাপুর অঞ্চল) মামলা করেছেন।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে র‌্যাব-১২ কমান্ডিং অফিসারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

এর আগে ফরিদ মিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্র সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ডিআইজির কাছে অভিযোগ এবং কোর্টে মামলা হওয়ার পর পুলিশ সুপারের চাপে পরিবার পরিজন নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ফরিদ মিয়া ও তার পরিবার।

সোমবার ( ৭ সেপ্টেম্বর) মামলার বিবরণ এবং আইজিপি বরাবর লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, নির্যাতিত পরিচ্ছন্ন কর্মী মো. ফরিদ মিয়ার পিতা মো. ইসমাইল হোসেন।

টাঙ্গাইল সদর থানার করটিয়া এলাকার খাগজানা গ্রামে তার বাড়ি।

নির্যাতিত ফরিদ মিয়া জানায়, তিন বছর ধরে তিনি পিটিসিতে পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে ন্যায়, নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে কাজ করে আসছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৩ মার্চ পিটিসির পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বাসায় কাজ করে বাসায় চলে আসি।

বিকেল চারটার দিকে তিনি আমায় ফোন করে বলেন, এখনই বাসায় আস। আমি দ্রুত স্যারের বাসায় চলে যাই।

বাসায় আসা মাত্র তিনি আমাকে বলেন, তুমি বাসা থেকে আমার স্ত্রীর এক লাখ টাকা চুরি করেছো।

আমি তাকে অনেক আকুতি-মিনতি করে বলেছি স্যার আমি টাকা চুরি করেনি।

তিনি আমার কথা না শুনেই বাসার একটি কক্ষে আটকে আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। তারপর মির্জাপুর থানায় খবর দেন।

থানার এসআই মো. আবুল বাশার মোল্লা ও এএসআই মেহেদী হাসান আমাকে থানায় নিয়ে হাত-পা ও চোখ বেঁধে তিন দিন থানায় আটকে রেখে দ্বিতীয় দফায় একাধিকবার নির্যাতন করেন।

এক পর্যায়ে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।

তিনদিন পর খবর দিয়ে আমার ভাই সমেজ, চাচা আব্দুল মান্নান, স্ত্রী মুক্তা ও ভাতিজা মহর আলীকে থানায় ডেকে আনা হয়।

ওই দুই পুলিশ সদস্য এসপিকে দেওয়ার জন্য আমার আত্মীয়দের এক লাখ টাকা দিতে বলেন।

টাকা না দিলে তাকে জানে মেরে ফেলার হুমকি ও বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানো ভয় দেখান।

নিরুপায় হয়ে তার পরিবার বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার দেনা করে বাশার ও মেহেদীর হাতে তুলে দেন।

পরে এই টাকা নিয়ে আবুল বাশার, মেহেদী ও ফরিদসহ তার পরিবার পিটিসির এসপি রহিম শাহ চৌধুরীর বাসায় যান।

এসপি ৭০ হাজার টাকা নিয়ে পরে তাকে ছেড়ে দেয় এবং চাকুরী থেকে চলে যেতে বলেন।

এদিকে টাকা চুরির মিথ্যা অপবাদ এবং চাকুরী চলে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে চরম বিপাকে পরেছেন এই পরিচ্ছন্ন কর্মী।

ছাড়া পেয়ে ঘটনার তিনি টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও করটিয়ার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

পিটিসির পুলিশ সুপার আব্দুর রহিম শাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, রাজশাহীতে মমতা নার্সিং ইন্সটিটিউট দখল এবং চুয়াডাঙ্গা ও ঠাকুরগাঁয় কর্মরত থাকা অবস্থায় তার বিরুদ্ধে অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে উঠে।

সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে প্রত্যাহার করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে ফরিদ মিয়া পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), স্বরাষ্ট্র সচিব এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বরাবর গত ২২ মার্চ লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ন্যায় বিচার না পাওয়ায় তিনি গত ২৪ আগস্ট এসপিসহ দুইজন এসআইকে আসামী করে কোর্টে মামলা দায়ের করেছেন।

বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২ এর কমান্ডিং অফিসারকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাদী।

এর আগে গত ১৮ জুলাই তিনি ঢাকার সেগুন বাগিচায় ক্রাইম রিপোর্টার্স এসোসিয়েশনে ন্যায় বিচার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার ওই দুই কর্মকর্তা বলেন, পিটিসির এসপি স্যারের নির্দেশে তাকে আটক করি।

থানায় তিন দিন রাখার পর ৭০ হাজার টাকা এসপি স্যারকে দিয়ে ফরিদ মুক্তি পেয়েছে।

থানায় তাকে নির্যাতন করা হয়নি বলে তারা দাবী করেন।

মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সায়েদুর রহমান বলেন, ফরিদের বিষয়ে পুলিশের হেডকোয়ার্টার তদন্ত করছেন।

এ ব্যাপারে পিটিসির পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রহিমের সঙ্গে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বার বার ফোন কেটে দেন।

এর আগে তিনি বলেছিলেন আমার বাসা থেকে স্ত্রীর এক লাখ টাকা চুরির অভিযোগে পরিচ্ছন্ন কর্মী ফরিদকে আটক করা হয়।

পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে ৭০ হাজার টাকা দিয়ে চাকরী ছেড়ে চলে গিয়েছে।

ফরিদকে তার বাসায় আটকিয়ে এবং থানায় নিয়ে কোন নির্যাতন করা হয়নি বলে তিনি দাবী করেছিলেন।

ফরিদ তার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দিয়েছে তা মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো।

এ বিষয়ে র‌্যাব-১২ এর কমান্ডিং অফিসার বলেন, এ ধরনের মামলার তদন্তের জন্য কোন কাগজপত্র এখনো পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মহেড়া পিটিসি’র কমান্ডার ডিআইজি শামীমা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ ছাড়া এ বিষয়ে কোন কিছু বলা সম্ভব নয় বলে তিনি জানিয়েছেন।

সূত্র – ইত্তেফাক। সম্পাদনা – অলক কুমার